January 9, 2025, 5:36 pm

মাধ্যমিক শিক্ষায় শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের থেকে এগিয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা।

অনলাইন ডেক্স
  • Update Time : Wednesday, November 30, 2022,
  • 28 Time View

১৯৮৫ সনে পূর্ব লন্ডনে বসবাসকারী ব্রিটিশ বাংলাদেশি জনসংখ্যা সম্পর্কে দুটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল গণমাধ্যমে। এর একটি ছিল একাডেমিক জার্নাল ও অন্যটি শিক্ষা প্রতিবেদন। দুটি নিবন্ধই তখন হতাশাজনক ছিল। কারণ, শিক্ষা ও কাজের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশিরা।

তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। শিক্ষার দিক থেকে অনেক এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশরা। খবর দ্য ইকোনোমিস্টের।

 

প্রতিবেদনে সাপ্তাহিক ব্রিটিশ পত্রিকাটি জানায়, গত দুই দশকে মাধ্যমিক স্কুলের ফলাফলে শ্বেতাঙ্গ শিশুদের পেছনে ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ শিশুরা। এমনকি ১৬ বছর বয়সে নেওয়া জিসিএসই (জেনারেল সার্টিফিকেট অব সেকেন্ডারি এডুকেশন) পরীক্ষার ফলাফলে অনেক এগিয়ে রয়েছে তারা। অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠী বাংলাদেশিদের মতো এতটা উন্নতি করতে পারেনি। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ ও চাকরির বাজারে শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে টেক্কা দিচ্ছে তারা।

১৯৭০ এর দশকের শুরুর দিকে ব্রিটেনে আসতে শুরু করেন বাংলাদেশি অভিবাসীরা। লন্ডনের পূর্ব প্রান্তে বসতি স্থাপন করতে থাকেন তারা, যেটি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক জেলার খুব কাছাকাছি ছিল। ধীরে ধীরে সেখানে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। গড়ে ওঠে বাঙালি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে শিক্ষা ক্ষেত্রে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়েরা অনেক এগিয়ে গিয়েছে বলেও ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

পূর্ব লন্ডনে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান ‘মুলবেরি স্কুল’। ২০০৬ সালে মেয়েদের এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন ভেনেসা ওগাডেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমাদের স্কুলের মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইতো না। তারা বিয়ের করে ঘরে থাকতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো। ’

২০০৪ সালে দেশটির সরকারের পক্ষ্য থেকে স্কুলটি পরিদর্শনে আসনে এক ইন্সপেক্টর। ওই সময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নারী বলেছিলেন, ‘যখন আমরা বিয়ে করবো ও আমাদের ঘরে মেয়ে হবে। তবে আমরা তাদের আগের মতো নয় বরং শিক্ষিত করে লালনপালন করবো। ’ সেই কথা রেখেছেন ওই নারী।

বর্তমানে উচ্চ শিক্ষায় মুলবেরি স্কুল অসাধারণ সফলতা দেখিয়েছে। স্কুলটির অনেক সাবেক শিক্ষার্থী চলতি বছরে বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

ইংল্যান্ডের যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য লড়াই করছেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ২০০৯ সালে পাঁচ শতাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য লড়েছেন। এক বছরের ব্যবধানে এই সংখ্যা ১৬ শতাংশে পৌঁছায়। অন্যদিকে, এক বছরের ব্যবধানে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের সংখ্যা পৌঁছেছে ১০ শতাংশে, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ।

মুলবেরির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মেয়েদের মধ্যে লন্ডন ইউনিভার্সিটিতে পড়ার প্রবণতা বেশি, কারণ বাড়িতে থেকে পড়া যায়। তবে বাবা-মার সাহসী পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও যাচ্ছে তারা।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশি ব্রিটিশ এই সাফল্যের পেছনে রয়েছেন হেইদি মির্জা। ১৯৯৭ সালে লেবার পার্টি সরকার হেইদি মির্জাকে এডুকেশন টাস্ক ফোর্সে নিযুক্ত করেন। দরিদ্র শহরগুলোতে শিক্ষার জন্য অতিরিক্ত বাজেটের ব্যবস্থা করেন তিনি। আর সেই ফল এখন আসতে শুরু করেছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে কনজারভেটিভ পার্টি। এর ফলে সরকারি নীতির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। তবে এই তালিকায় লন্ডনের একটি স্কুলও নেই। এতে করে সম্ভাবনাময় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ক্ষতি হতে পারে। তবে এই ক্ষতি বেশি সময়  থাকবে না বলে আশাপ্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

লন্ডন শহর নতুন করে গড়ে ওঠে ১৯৮০ এর দশকে। আর এতেও অবদান রয়েছে বাংলাদেশিদের। ২০১৯ সালের এক জরিপে দেখা যায়, লন্ডন কেন্দ্রিক যেসব জাতিগোষ্ঠী রয়েছে, তার মোট জনসংখ্যার ৫৫ শতাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। এসব অভিবাসীরা শহরটির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে।

যাইহোক ব্রিটেনের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের ২৪ শতাংশ এখনও আয় সম্পর্কিত কোনো সুবিধা পায়ন না। যেখানে আয় সম্পর্কিত সুবিধার গড় ১৬ শতাংশ।

যুক্তরাজ্যের অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্সের অনুমান, এক মধ্যম আয়ের ব্রিটিশ পরিবারের তুলনায় বাংলাদেশি পরিবারের সম্পদ রয়েছে মাত্র এক পঞ্চমাংশ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্রিটেনে ১৬-৬৪ বছরের মধ্যে যেসব বাংলাদেশি নারী রয়েছে তার অর্ধেকই অর্থনৈতিকভাবে সংক্রিয় অর্থাৎ তারা বাড়ির বাইরে কাজ করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: রায়তা-হোস্ট
tmnews71